Twelve Years A Slave-সিনেমার সম্পূর্ণ গল্পটি বাংলায় পড়ুন || হলিউড সিনেমার গল্প বাংলায় পড়ুন ||
- আজকালের অনেকেই আছে যারা তাদের প্রেমের সম্পর্কে ব্যর্থ হয়েই নিজের জীবন শেষ করে দেয়! তারা শুধুমাত্র এই সামান্য কষ্ট টুকুই সহ্য করতে পারে না! কিন্তু জীবনে এমন কিছু কষ্ট থাকে! যা মন ও শরীর দুটোকেই শেষ করে দেয়। যদি আপনার জীবনে কোনো কষ্ট থেকে থাকে! তাহলে একবার সেই মানুষ গুলোর কথা একবার ভেবে দেখুন!- যাদের কৃতদাস বানানো হত..
- তাদের জীবন টা কতটা কষ্টের হত, তা হয়তো একটি লেখার মাধ্যমে বোঝানো বা বলা সম্ভব না! কিন্তু আজকের এই লেখা পড়ার পর আপনি এমন একজনের সম্পর্কে জানতে পারবেন! যাকে এক সময় কৃতদাস বানানো হয়েছিল ।
- তার ওপর এত অত্যাচার করা হয়েছিল ! যার জন্য তার কাছে মৃত্যুও সুখের বলে মনে হয়েছিল।।
- এই গল্পটা 1841 এর সময়কার। এটা এমন একটা সময় ছিল যখন কালো চামড়ার মানুষদের ওপর খুব অত্যাচার করা হত। আর এই সময় টাতে কালো চামড়ার মানুষদের কৃতদাস বানানো হত।
- আজকের দিনে যেমন আমরা বাজার থেকে শাক- সবজি কিনে আনি, তখন সাদা চামড়ার মানুষেরা বাজার থেকে কালো চামড়ার মানুষদের এভাবেই কিনে নিত।
- আর এভাবে মানুষ কেনার পর তাদের সাথে যা ইচ্ছে! আর যেভাবে ইচ্ছে কাজ করানো হত। কালো চামড়ার মানুষদের জীবনের কোনো দাম ছিলনা!
- সাদা চামড়ার মানুষ যদি কালো চামড়ার মানুষকে মেরেও ফেলতো! তাহলেও কেউ কিছুই বলতো না।
- এই গল্পটা " Twelve Years A Slave " নামক সিনেমার । এই সিনেমাতে সোলেমান নরথাপ নামের জীবনের সেই কষ্টের ঘটনা গুলো তুলে ধরা হয়েছে !
- যা তার সাথে ঘটেছিল। সোলেমান একজন আফ্রিকান ছিলেন। কিন্তু তিনি নিউইয়র্ক এ তার পরিবারের সাথে থাকতেন।
- এবং তিনি ভায়োলিন বাজাতেন। তিনি তার পরিবারের সাথে বেস সুখেই ছিলেন। কিন্তু একদিন দুজন সাদা চামড়ার লোক তার কাছে এসে, তাকে কাজের জন্য অফার করে। এই কাজের অফারে নরথাপ খুশী হয়ে যায়। কারণ তার কাছে তখন কাজের দরকার ছিল, এবং যারা তার কাছে কাজের ব্যপারে এসেছে, তারা নরথাপকে বেস ভালো টাকার দেওয়ার কথাই বলছিল, তাই নরথাপ তাদের সাথে নিউইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটন চলে আসে।
- ওয়াশিংটনে আসার পর নরথাপকে সেই দুজন ব্যক্তি একটি রেস্টুরেন্টে নিয়ে যায় । রেস্টুরেন্টে সেই সাদা চামড়ার লোক দুটো নরথাপকে অনেক মদ্যপান করায়.. আর এত বেশি মদ্যপান করার জন্য নরথাপ অজ্ঞান হয়ে পরে।
- যখন নরথাপ তার জ্ঞান ফিরে পায়, তখন সে দেখে যে কেউ তার হাত পা বেধে দিয়েছে । এবং নরথাপকে একটি অন্ধকার ঘরে আটকে রাখা হয়েছে। নিজের এই অবস্থা দেখে নরথাপ বুঝে যায়, যে তাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে ! আর এরপর নরথাপের সাথে কি হতে পারে, তা নরথাপ ভালোই বুঝতে পারছিল...
- এটা হল সেই সময়, যেই সময় কালো চামড়ার মানুষেরা, সাদা চামড়ার মানুষদের কাছে পশুর থেকেও খারাপ ছিল।
- নরথাপকে যেখানে আটকে রাখা হয়, সেখানে দুজন লোক আসে। তাদের দেখে নরথাপ এটা বলার চেষ্টা করে যে সে কোনো কৃতদাস নয়! কিন্তু সেই লোকগুলো নরথাপের কোনো কথা শোনেনা!
- তারা নরথাপের ওপর হঠাৎ করেই মারতে শুরু করে দেয়। নরথাপকে কেন মারা হল? এর জবাব কারোর কাছেই নেই! নরথাপ এখন একজন দাস.. আর তার জীবন এখন পশুর থেকেও খারাপের দিকে ছুটে যাচ্ছে ।
- কিছু পর নরথাপকে একটি বাজারে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে তাকে একটি রুমে ঢোকানো হয়ে, যেখানে অন্য সাদা চামড়ার লোকেরা তাদের জন্য দাস কিনতে আসে। এখানে কালো চামড়ার মানুষকে এমন ভাবে তোলা হয়ে, যেমন আজকাল বাজারে জিনিস পএ তোলা হয়। এখানে নরথাপ শুধুমাত্র একা নয়.. তার সাথে আরও অনেক কালো চামড়ার মানুষকে দাড় করিয়ে রাখা হয়।
- সাদা চামড়ার মানুষরা এখান থেকে দরদাম করে মানুষ কিনে নেয়.. ভাবতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি । মানুষ যে কত খারাপ হতে পারে! তার কোনো ঠিক নেই ।
- এখানে যখন নরথাপকে বেচার জন্য দাড় করিয়ে রাখা হয়, তখন নরথাপকে দেখে এক সাদা চামড়ার লোকের নরথাপকে পছন্দ হয়। আর সেই ব্যক্তি নরথাপকে সেখান থেকে কিনে নেয়।
- আর সেই সাদা চামড়ার ব্যক্তি নরথাপকে তার সাথে নিয়ে যায় ।
- সেই ব্যক্তি নরথাপকে কিনে নেওয়ার পর, নরথাপকে তার কাজের জায়গায় নিয়ে আসে।
- নরথাপের এই প্রথম মালিক একজন ভালো মানুষ।
- তিনি হোয়াইট হলেও তার কাজের লোকেদের সাথে ভালো ব্যবহার করেন।
- এখানে নরথাপকে কিছু সহজ সহজ কাজ দেওয়া হত। কিন্তু যেহুতু নরথাপ একজন শিক্ষিত এবং উচ্চ ব্যক্তি! তাই নরথাপের এসব কাজ করতে কোথাও না কোথাও আটকাতো।
- কিন্তু নরথাপকে এসব কাজ করতেই হত.. কারণ তাকে অন্য এক দাস এটা বলেছিল যে, নরথাপ যে শিক্ষিত! এই কথা যেন সে কাউকে না বলে!
- আর কখনো কাউকে এই কথা বলা যাবেনা! যে নরথাপ কোনো কাজের দাস নয়! তাহলে নরথাপকে তারা মেরেই ফেলবে।
- এখানে কয়েকদিন নরথাপের কোনো রকম ভাবে কেটে যায়। কিন্তু এখানের যে সুপারভাইজার, তার সাথে নরথাপের ঝামেলা হয়ে যায়! যার জন্য নরথাপকে তার মালিক অন্য মালিকের কাছে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়।
- যদি নরথাপের মালিক তাকে অন্য মালিকের কাছে না বিক্রি করতো! তাহলে সেই সুপারভাইজার নরথাপকে মেরে ফেলতো।
- নরথাপকে তারা কাজের দাস ভাবে! তাই নরথাপকে খুন করলেও কেউ কিছুই বলবে না।।
- তাই নরথাপের মালিক তার জীবন বাঁচাতেই এই কাজ করে।
- নরথাপকে যেই নতুন মালিকের কাছে বিক্রি করা হয়, সেখানে অনেক কালো চামড়ার কাজের লোক আছে। এখানে নরথাপের নতুন মালিক খুব খারাপ মানুষ। তার মধ্যে দয়া মায়া কিছুই নেই..
- নরথাপের সাথে তার নতুন মালিক খুব খারাপ ব্যবহার করে।
- নরথাপকে যে কাজ করতে দেওয়া হয়, যদি নরথাপ সেই কাজটি সম্পূর্ণ না করতে পারে, তাহলে নরথাপকে চাবুক মারা হত।
- শুধুমাত্র নরথাপকেই নয়! এখানে সেই প্রত্যককেই অমানুষের মত চাবুক মারা হত, যারা তাদের সম্পূর্ণ কাজ করতে পারে না!!
- এখানে সারাদিন নরথাপকে কাজ করানো হত। যখন সারাদিন কাজ করার পর তারা ঘুমোতে যেত, তখন যদি কেউ তাদের নাচতে বলতো, তাহলে সবাইকে তাই করতে হত! কালো চামড়ার লোকেদের জীবনে কোনো শান্তি ছিলনা।
- সাদা চামড়ার লোকেরা যখন যা ইচ্ছে! তারা তাই করতো ।
- নরথাপ এখানে তার এই জীবন থেকে হাপিয়ে ওঠে। এখানে তাদের জীবনের কোনো দাম নেই.. আর কথায় কথায় তাদের ওপর অমানবিক অত্যাচার করা হয় । নরথাপ এখান থেকে পালিয়ে যেতে চায় ! কিন্তু এখান থেকে পালিয়ে যাওয়া এত সহজ নয়!
- যদি কোনো কালো চামড়ার লোককে পালিয়ে যাওয়ার সময় ধরে ফেলা হয়, তাহলে তাকে সবার সামনে ফাসিতে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় !! যাতে তার অবস্থা দেখে আর কেউ পালানোর সাহস না করে।
- এখানে নরথাপের "পেটছি " নামের একটি মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব হয়,। এই মেয়েটি তার কাজ ভালো ভাবেই সম্পূর্ণ করতে পারে! তাই এখানকার মালিক পেটছিকে আলাদা করে দেখে।
- কিন্তু নরথাপ তার কাজ ভালো ভাবে সম্পূর্ণ করতে পারে না! তাই নরথাপকে প্রতিদিন চাবুকের আঘাত সহ্য করতে হয়।
- পেটছি যে শুধুমাত্র তার কাজে ভালো, এই জন্য তার মালিক তার ওপর খুশি হত না.. তার মালিক পেটছির ইচ্ছের বিরুদ্ধে, প্রতিদিন তার ওপর শারীরিক নির্যাতন করতো!
- কিন্তু পেটছি এর বিরুদ্ধে কিছুই বলতে পারতো না..
- কারণ পেটছি যদিও কাউকে এই বিষয়ে অভিযোগ করতে যায়, তাহলে কাকেই বা বলবে?
- আর বলেই বা কি হবে? সে তো একজন ব্ল্যাক! তার জীবনের কোনো মূল্য নেই...
- নরথাপ অনেকদিন এখানে থাকার পর এখানে একজন হোয়াইট ম্যান আসে। আর এই হোয়াইট ম্যান মনের দিক থেকে অনেক ভালো ।
- নরথাপ এই হোয়াইট ম্যানের সাথে কথা বলে।
- নরথাপ তার কাছে সাহায্য চায়..
- নরথাপ তাকে বলে যে,
- আমি কোনো কাজের লোক নই! আমাকে এখানে চালাকি করে ফাসানো হয়েছে।
- লোকটি নরথাপের কথা বোঝে। আর সে নরথাপের সাহায্য করার জন্য রাজি হয়।
- আসলে নরথাপ তার পরিবারের কাছে একটি চিঠি পাঠাতে চায়, যাতে তার পরিবারের লোক তার নরথাপের অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারে। এবং নরথাপকে এই নরক থেকে ছাড়িয়ে নিতে পারে।
- নরথাপ অনেক সময় নিয়ে তার চিঠি লেখে। এবং এই চিঠিটা সেই হোয়াইট লোকটি তার পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয়।
- আর এর কিছুদিন পরেই সেখানে মিস্টার পার্কার চলে আসেন।
- এখানে মিস্টার পার্কার তার সাথে পুলিশকে সাথে নিয়ে আসেন। এবং এরপর মিস্টার পার্কার নরথাপের এই অবস্থা দেখে অবাক হয়ে যায়... নরথাপ মিস্টার পার্কার কে দেখতে পেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে। এবং এরপর নরথাপ এই নরক থেকে মুক্তি পেয়ে যায়।
- কিন্তু যাওয়ার সময় পেটছি সেখানে এসে পরে..
- নরথাপ পেটছিকে দেখে তার কাছে দৌড়ে যায়.. আর পেটছি তাকে জড়িয়ে ধরে।
- এটাই হল নরথাপ ও পেটছির শেষ দেখা।
- আর এরপর নরথাপ মিস্টার পার্কারের সাথে ওয়াশিংটন থেকে নিউইয়র্ক তার পরিবারের কাছে ফিরে আসে।
- এই গল্পে নরথাপকে তো কিছুদিন ধরে এই অমানবিক অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছিল..
- যা মুক্তি পাওয়ার পর তাকে আর সহ্য করতে হয়নি!
- কিন্তু যারা ওখানে এখনো আটকে ছিল.. বা যাদের আটকে রাখা হয়েছিল, তাদের জীবনে কষ্টটা সারাজীবন ছিল।
- এমন কেউ ছিলনা, যে তাদের জন্য আওয়াজ তুলবে।
- কালো চামড়ার লোকেদের জীবন নরকের থেকেও খারাপ ছিল।
- যেমন পেটছি মেয়েটার জীবন ।
- নরথাপ বাড়িতে ফেরার পর সেই সব ঘটনা একটি বইতে লেখেন।
- 1853 তে নরথাপ সোলেমানের লেখা Twelve Years a Slave নামের এই বইতে সেই সব কথা ও অত্যাচারের কথা বলা হয়েছে! যা সেই সময় কালো চামড়ার কাজের লোকেদের সাথে করা হত।
- নরথাপ হলেই সেই ব্যক্তি যিনি প্রথম কৃতদাস প্রথার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে ছিলেন। আর এই কাজের জন্য সবাই তাকে আজও সম্মানের সঙ্গে শ্রদ্ধা জানায় ।।।
Written By - Ajit
x
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন