-The Railway Man - সিনেমার পুরো গল্পটির বাংলা অনুবাদ || বাংলাতে পড়ুন পুরো সিনেমার গল্প || Bangla Story
|
|
এই গল্পটা এমন একটি গল্প, যেখানে আমরা জানতে পারি যে, যখন কোনো যুদ্ধ হয়, তখন সেই যুদ্ধের পরে সেই যুদ্ধের যোদ্ধাদের মানসিক ও শারীরিক অবস্থা কতটা আঘাত প্রাপ্ত হয়। যুদ্ধ হয়তো শেষ হয়ে যায়.. কিন্তু যুদ্ধের সময় যে রক্তপাত হয়,.. সেই রক্তের দাগ হয়তো সারাজীবন থেকে যায়।
এই গল্পের শুরুতে একজনকে দেখানো হয় যার নাম এরিক লোমার্ক্স। এরিক ট্রেনে করে কোথায় একটা যেতে থাকে। ট্রেনে তার একটি মেয়ের সাথে আলাপ হয়। এই মেয়েটির নাম প্যাট্রিসিয়া। এরপর এরিক ও প্যাট্রিসিয়ার আলাপ টা বন্ধুতে পরিণত হয়। এবং তাদের এই বন্ধুত্ব টা প্রেমে পরিণত হয়।
এবং এরপর এরিক ও প্যাট্রিসিয়া দুজনে বিয়ের পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
এরিক ও প্যাট্রিসিয়া বিয়ের পর একসাথে একটি বাড়িতে থাকতে শুরু করে। একদিন এরিক যখন তার ঘরে শুয়ে থাকে তখন সে দেখে যে তাকে কয়েকজন জাপানি সৈনিক একটা রুমের ভেতরে জোর করে নিয়ে যাচ্ছে। এই দেখে এরিক চিৎকার করতে থাকে। সে সেই রুম থেকে দুরে থাকতে চায়। এবং চিৎকারের ফলে যখন এরিকের চোখ খোলে তখন সে দেখতে পায় যে সে নিজের রুমেই আছে।
এবং এরিক এটা বুঝতে পারে, যে এতক্ষন ধরে যেটা এরিক দেখছিল, সেটা তার কল্পনা বা একটা বাজে স্বপ্ন মাএ।
কিন্তু এই স্বপ্নটা মনের ভুল হলেও এই ঘটনাটা তার সাথে আগে ঘটে গিয়েছে। যার জন্য এরিক আজও এই স্বপ্ন টা নিজের কাধে বয়ে চলেছে।
এরিকের চিৎকার শুনে প্যাট্রিসিয়া তার রুমে আসে। এবং এরিককে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে তার চিৎকার করার কারণ জানতে চায়। কিন্তু এরিক তাকে কোনো জবাব দেয়না।
কিন্তু এরপর প্যাট্রিসিয়া লক্ষ্য করে যে, এরিক মাঝে মাঝেই একটা স্বপ্ন দেখে চিৎকার ওঠে। এরকম ঘটনা বেশ কয়েকবার ঘটে যায়। কিন্তু যখন প্যাট্রিসিয়া এরিক কে এই বিষয়ে জিগ্যেস করে যে এরিক কেন বার বার এভাবে চিৎকার করে ওঠে। আসলে সে কি এমন দেখে যা দেখার পর তার এত ভয় হয়।
কিন্তু প্যাট্রিসিয়ার এই প্রস্নের কোনো উওর এরিক তাকে দেয়না।
যখন প্যাট্রিসিয়ার বার বার জিগ্যেস করার পরেও এরিক তাকে এই সম্পর্কে কিছুই বলেনা...
তখন প্যাট্রিসিয়া "ফিনলে " বলে এরিকের এক বন্ধুর সাথে দেখা করে। এবং প্যাট্রিসিয়া জানতে চায় যে, এরিকের সাথে আগে কি এমন হয়েছিল? যার জন্য এরিক আজ পযর্ন্ত সেসব ভুলতে পারেননি।
এবং ফিনলে প্যাট্রিসিয়ার কথার জবাব দেয়। এবং এখান থেকে গল্প অতীতে পা রাখে। এই সময় টা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, 1942।
এই সময় এরিক একজন ব্রিটিশ আর্মি অফিসার। তার পোস্টিং হয় সিঙ্গাপুরে। যখন এরিক বাকি আর্মি অফিসারদের সাথে তার ডিউটিতে থাকে, তখন হঠাৎ সেখানে জাপানি সৈনিকের দল আক্রমণ করে। এবং এরিকের সাথে বাকি সব ব্রিটিশ অফিসারদের বন্দি করে নেওয়া হয়।
এখান থেকে ব্রিটিশ অফিসারদের বন্দি করার পর তাদের জাপানের Prisoners Camp এ নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে ব্রিটিশ অফিসারদের সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করা হয়। তাদের দিয়ে পশুর মত কাজ করানো হয়।
এবং এরপর ব্রিটিশ অফিসারদের " Thai - Berma" রেলওয়ে ক্যাম্প নিয়ে যাওয়া হয়। এবং এখানে এদের দিয়ে রেলওয়ের অনেক কাজ করানো হতে থাকে। কিন্তু ব্রিটিশ অফিসারদের দিয়ে শুধু কাজ করানো হত না! তার সাথে চলতো অনেক ধরনের অত্যাচার । যা এরিক আজ পযর্ন্ত ভুলতে পারেনি।
এখানে কয়েকজন ব্রিটিশ সৈনিক এই আলোচনা করে যে তারা এখান থেকে পালিয়ে যাবে। কিন্তু এখান থেকে পালানো এতটাও সহজ না।
এরা ঠিক করে যে এখানে এরিক একটা রেডিও বানাবে। এবং সেই রেডিওর মাধ্যমে বাইরের দুনিয়ার খবর শুনবে।
এবং কিছুদিন পরেই এরিক এখানকার সামান্য সরঞ্জাম দিয়েই একটা রেডিও বানিয়ে ফেলে। এটা দিয়ে ব্রিটিশ আর্মিরা তাদের দেশের খবর শুনতো।
কিন্তু কয়েকদিন পরেই এখানকার জাপানি সৈনিকরা এরিকের সেই রেডিও কথা জানতে পেরে যায়। তারা এটা ভাবে যে এই রেডিওর মাধ্যমে ব্রিটিশ আর্মিরা জাপানি সৈনিকদের তথ্য বাইরে পাঠাচ্ছিল।
আর এই কারণেই জাপানি আর্মি অফিসার চারজন ব্রিটিস সৈনিককে ধরে। এই চারজনের মধ্যে এরিক এবং ফিনলেও থাকে। ফিনলে হল সেই ব্যক্তি যিনি এখন এইসব ঘটনা প্যাট্রিসিয়ার কাছে বলছে। জাপানি সৈনিকরা এই চারজনের একজনকে মারতে মারতে তার অবস্থা খারাপ করে দেয়।
আসলে জাপানি সৈনিকরা এটা জানতে চায় যে কে এই রেডিও বানিয়েছিল।
এবং জাপানি সৈনিকের এরপর অত্যাচার দেখে এরিক নিজেই বলে যে, সে এই রেডিও বানিয়েছিল। এখানে এরিকের মুখ খোলার কারণ ছিল, এরিক চায়না যে বিনা কারণে তার জন্য কেউ অত্যাচারিত হোক।
তাই এরিক নিজেই এগিয়ে আসে।
যখন এরিক বলে যে সেই এই রেডিও বানিয়েছিল, তখন জাপানি সৈনিকরা এরিককে একটি রুমে নিয়ে যায়। এটা হল সেই রুম, যা এরিক তার স্বপ্নে আজও দেখতে পায়। সে আজও এই রুমকে ভুলতে পারেনি।
এখানে জাপানি সৈনিকদের হেড, যার নাম ক্যাম্পেটাই...সে এরিককে বলে যে, এরিক একজন অপরাধী। কারণ সে রেডিও বানিয়ে এখানের খবর বাইরে পাঠিয়েছে। কিন্তু এরিক তাকে বলে যে, এরিক যেই রেডিও বানিয়েছিল, তাতে শুধুমাত্র খবর শোনা যায়। তার মাধ্যমে কথা বলা যায়না।
কিন্তু ক্যাম্পেটাই এরিকের কথা শোনে না। ক্যাম্পেটাই এর মনে হয় যে এরিক তাকে মিথ্যে বলছে।
এবং এই কারণে এরিকের ওপর দিনের পর দিন অত্যাচার চলতে থাকে। ক্যাম্পেটাই বার বার এরিকের কাছে সেই একি প্রস্ন করে। কিন্তু এরিক বার বার এই কথাই বলে যে এরিক তার রেডিওর মাধ্যমে কাউকেই কোনো খবর দেয়নি।
কিন্তু এরপরও এরিকের কথায় কেউ বিশ্বাস করে না। এবং দিনের পর দিন এরিকের ওপর অত্যাচার চলতে থাকে। এরিকের ওপর এত বেশী অত্যাচার করা হয় যে এরিক আজ পযর্ন্ত তা ভুলতে পারেনি। তার এখনো মনে হয় যে এই ঘটনা গুলো এখন ঘটছে। এবং সে সেই অত্যাচারের যন্ত্রণা ভোগ করছে।
এর কিছুদিন পর যখন এরিককে একটি খাঁচার ভেতরে আটকে রাখা হয়, তখন এরিক দেখতে পায় যে অনেক গুলি প্যারাসুট আকাশ থেকে নিচে নামছে। এবং এই প্যারাসুট গুলো ব্রিটিশ আর্মির। যারা এখন জাপানি সৈনিকদের বন্দি করে নেয়।
এবং এরপর জাপানি সৈন্যদের একটা লাইনে দাড় করিয়ে তাদের খারাপ ব্যবহারের নিন্দা করা হয়। এবং ক্যাম্পেটাই কে জিগ্যেস করা হয় যে, যে ক্যাম্পেটাই কি না?
কিন্তু ক্যাম্পেটাই মিথ্যা বলে। এবং যেহেতু ক্যাম্পেটাই ইংরেজি জানে তাই তাকে আলাদা করা হয়। কারণ সে জাপানি সৈন্যদের তাদের ভাষায় ব্রিটিশ অফিসারদের কথা বোঝাতে পারবে।
এরপর গল্প বতর্মানে ফিরে আসে। এবং এখন প্যাট্রিসিয়ার কাছে সব পরিস্কার যে, কেন এরিক তার স্বপ্নে চিৎকার করে ওঠে।
এর কয়েকদিন পর ফিনলে এরিকের বাড়িতে আসে। এবং ফিনলে এরিক কে জাপানে যেতে বলে। এবং সে ক্যাম্পেটাই এর থেকে তাদের অত্যাচারের বদলা নিতে বলে। কিন্তু ফিনলে নিজেও সেই একি ধরনের কষ্ট ভোগ করছিল যা এরিক ভোগ করছে।
এবং ফিনলে তার কষ্ট সইতে না পেরে মৃত্যুবরণ করে।
এরপর এরিক ফিনলের বলা কথায় জাপানের সেই জায়গায় চলে আসে যেখানে তাদের বন্দি বানানো হয়েছিল। এবং তাদের ওপর অত্যাচার করা হত। এখানে ক্যাম্পেটাই এখন একজন টুরিস্ট গাইড হিসেবে কাজ করে।
যখন এরিক এখানে আসে তখন ক্যাম্পেটাই প্রথমে তাকে চিনতে পারে না। কিন্তু পরে এরিককে দেখে বুঝে যায়, যে এ হল সেই! যার ওপর তারা অত্যাচার করেছিল।
এখানে এরিক ক্যাম্পেটাই এর সাথে দেখা হবার পর সেই রুমে নিয়ে যায়! যেখানে ক্যাম্পেটাই এরিকের ওপর অত্যাচার চালাতো।
এখন এরিক ক্যাম্পেটাই কে তার কাজের শাস্তি দিতে চায়। কিন্তু এরিক এটা করতে পারে না। কারণ এরিক বাকি সবার মত নয়। সে শান্তি চায়। রক্ত নয়।
এইসব ঘটনার মধ্যে দিয়ে এরিক বুঝতে পারে যে, ক্যাম্পেটাই ও সেই একি রকম যন্ত্রণা সহ্য করছে! যা ফিনলে করতো। এবং এরিক এখনো সহ্য করছে।
এবং এই জন্যই এরিক ক্যাম্পেটাইকে ক্ষমা করে দেয়। এবং তারা বন্ধুতে পরিণত হয়।
এবং এর সাথেই এই সিনেমার গল্পটি এখানেই শেষ হয়ে যায়।।।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন