More Then Blue
আপনি যদি না যেনে থাকেন যে ভালোবাসা মানে কি! বা ভালোবাসা কাকে বলে.. তাহলে আজকের গল্পটা পড়ার পর,, আপনি ভালোবাসা কাকে বলে সেটা জানতে পারবেন। এবং বুঝতে পারবেন, - ভালোবাসার আসল মানে!!
এই গল্পটা অদ্ভুত দুজন বন্ধুকে নিয়ে। এই গল্পটা এমন একটা গল্প,, যেখানে সবাই নিজেকে কষ্ট দিয়ে অন্যকে খুশি করতে চায়। গল্পের প্রধান চরিত্র হল "ক্রিম " নামের একটি মেয়ে। এবং " কে " নামের একটি ছেলে। এরা দুজন যখন প্রথম একে - অপরকে দেখে ছিল,- তখনই তাদের মনে মনে বন্ধুত্ব হয়ে যায়। আর এই বন্ধুত্বের হাত ধরেই দুজন একসাথে থাকতে শুরু করে। ক্রিম ও কে - এর নাম শুনতে হয়তো একটু অদ্ভুত লাগে। কিন্তু এটা তাদের নিজেদের ঠিক করা নাম। মানে একজন - অন্য আরেকজনকে নতুন নাম দিয়েছে।
"কে " - এর আসল নাম কার্ল ছিল.. কিন্তু মেয়েটি তার নাম বদলে দেয়। মেয়েটি তার নতুন নাম দেয় -"কে "।
এবং "কার্ল " - মেয়েটির নাম "কেট " - থেকে ক্রিম করে দেয়। কারণ " কে" - এর মতে কেট ক্রিমের মতই মিস্টি এবং সুন্দর! তাই কে - কেট কে ক্রিম বলে ডাকে।
কে ও ক্রিমের স্কুল ও কলেজ শেষ হওয়ার পরে এরা দুজনেই একটা মিউজিক স্টুডিওতে কাজ করে। যেহুতু এরা দুজনেই সেই স্কুল লাইফ থেকে একসাথে থেকে আসছে.. তাই বড়ো হওয়ার পরও কাজটাও একি জায়গায় নিয়েছে।
"কে " এখানে বিভিন্ন মিউজিক শো ম্যানেজ করার কাজ করে, এবং ক্রিম এখানে বিভিন্ন গানের লিরিক্স লেখার কাজ করে।
এরা দুজনেই নিজের কাজের নিয়ে ব্যস্ত থাকতে ভালো বাসতো। সকালে একসাথে কাজে যাওয়া.. ও বিকেলে কাজের শেষে একসাথে বাড়ি ফেরা.. - এটা দুজনের প্রতিদিনের রুটিন।
"কে "এবং ক্রিম দুজন - দুজনকে ভালোবাসে। কিন্তু "কে " কোনোদিন ই ক্রিম কে এটা বলেনি, যে সে ক্রিম কে ভালোবাসে। তাদের মনের ভাষায় দুজনেই দুজনকে তাদের ভালোবাসার কথা হয়তো বলেছে! কিন্তু সেই কথা এখনো তারা মুখে বলেনি।
"কে "- ক্রিম কে এই কারণেই তার মনের কথা বলেনি, কারণ " কে " -এর ক্যান্সার রয়েছে। আর " কে" এটা চায়না - যে ক্রিম তাকে বিয়ে করার পর একা থাকুক। " কে " যেকোনো সময় মারা যাবে! আর তার মৃত্যুর পর ক্রিম তাকে ছাড়া থাকতে পারবেনা।
"কে" এর যে ক্যান্সার আছে! তা ক্রিম জানেনা। আর হয়তো "কে" তাকে ক্যান্সারের কথা কোনোদিন বলতেও পারবেনা। কিন্তু সময় ক্রিমকে সবটা জানিয়ে দেয়।
"কে " ক্রিমকে তার মনের কথা বলতে চায়না!
কিন্তু "ক্রিম" নিজেও কোনোদিন "কে" এর কাছে তার মনের কথা শেয়ার করেনি।
যদিও এরা দুজনেই ভালো করে জানে - যে এরা দুজন - দুজনকে ছাড়া থাকতে পারবেনা! কিন্তু তবুও কেউ কাউকে তাদের মনের কথা বলেনা।।
একদিন ক্রিম যখন গানের লিরিক্স লেখে, -তখন একজন গায়কের সেই লিরিক্স পছন্দ হয়না। স্টুডিওর ডিরেক্টর ক্রিম কে তার কাজে মন দেওয়ার কথা বলে। এবং তার কাজ নিয়ে আরও পরিশ্রম করতে বলে। তখন সেই স্টুডিওর যে ডিরেক্টর -তার কথা শুনে ক্রিমের মন খারাপ হয়ে যায়... আর সে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে আসে। এবং সে কাঁদতে থাকে।
এরপর "কে" যখন বাড়িতে এসে ক্রিমের এরকম অবস্থা দেখে, -তখন তার কাছে তার কান্না করার কারণ জানতে চায়।
ক্রিম তার কান্নার কারণ হিসেবে স্টুডিওর কথাগুলোই বলে। কিন্তু ক্রিমের কান্না করার আসল কারণ অন্য কিছু ছিল।
ক্রিম - " কে" এর কাছে জানতে চায় যে, যদি সে আবার কখনো জন্ম নিতে পারে, তাহলে সে কি হতে চাইবে?
এই প্রশ্নের উওরে "কে" - ক্রিম কে বলে যে, সে হাতের আংটি বা বই, ডাইরি - এসবের মধ্যে কিছু হতে চায়। যাতে আমি সারাজীবন তোমার সাথে থাকতে পারে।
পরদিন "কে" ক্রিম কে বলে যে -,
- তোমার পায়ের আঙ্গুল অনেক বড়ো। তার মানে তোমার মা তোমার থেকে বেশিদিন বাচবে।
- আমি এটা কোথায় একটা পড়েছিলাম।
-
কিন্তু ক্রিম তখন বলে যে, - এটা মিথ্যে! আমার মা বাবা অনেক আগেই একটা অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছেন।
কিন্তু "কে"! যদি তুমি আমার আগে আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবো! তাহলে আমি তোমাকে মেরে ফেলবো। তুমি সারাজীবন আমার সাথে থাকবে।
ক্রিম - "কে" এর কাছে জানতে চায় যে তার কোনো ইচ্ছে বা কোনো গোপন কথা আছে কিনা!
তখন কে ক্রিম কে বলে যে -তার ইচ্ছে হল - ক্রিম যেন কোনো ভালো ছেলেকে বিয়ে করে। এবং তার সাথেই সারাজীবন থাকে।
"কে " এর কথায় ক্রিম জানতে চায় যে সে তাকে কেন বিয়ে করতে পারবেনা!
তখন " কে" ক্রিমকে বলে -যে সে কোনো ভালো ছেলে নয়। তাই তাকে সে বিয়ে করতে পারবেনা।
ক্রিমের নিজের ইচ্ছা না থাকা সত্বেও - "কে " এর কথা মানতে হয়।
কারণ ক্রিম এই কথা জানতে পেরে যায় -যে "কে" এর ক্যান্সার আছে। আর "কে" বেশীদিন বাচবে না।
এই কথাটা "কে " জানেনা যে ক্রিম তার ক্যান্সার সম্পর্কে জানতে পেরে গেছে। কিন্তু এখন "কে" এবং ক্রিম দুজনেই একি কষ্ট সহ্য করবে। আর সেই কষ্টটা হল - নিজের ভালোবাসার মানুষ টাকে হারানোর ভয়।
'কে" এর কথায় ক্রিম তাদের স্টুডিওর একজন ডাক্তার এর সাথে আলাপ করে। এবং সেই ডাক্তারের সাথে ক্রিমের আস্তে আস্তে বন্ধুত্ব হয়ে যায়।
ক্রিম একদিন সেই ডাক্তার কে বলে -, যে ক্রিম তাকে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু ডাক্তার ক্রিম কে বলে যে তার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। সে ক্রিমের সাথে সম্পর্কে জড়াতে পারবেনা।
কিন্তু ক্রিম ডাক্তারের কথায় গুরুত্ব না দিয়ে, তাকে বলে যে, তার বিয়ে ঠিক হওয়া নিয়ে তার কোনো মাথা ব্যথা নেই। কিন্তু ক্রিম তাকেই বিয়ে করতে চায়।
এরপর বাড়ি ফিরে যখন ক্রিম "কে " কে ডাক্তার ও তার সম্পর্কের কথা বলে,. - তখন "কে" এর মন ভেঙ্গে যায়। কারণ সে ক্রিম কে ছাড়া থাকতে পারবেনা। কিন্তু এই কথায় আবার সে খুশিও হয়.. কারণ এখন ক্রিম একজন ভালো মানুষের সাথে সারাজীবন কাটাতে পারবে। - আর ক্রিমের খেয়াল রাখার মত একজন মানুষ ক্রিমের পাশে থাকবে।
"কে" যখন ডাক্তার এর সম্পর্কে খোঁজ খবর করে,, তখন সে জানতে পারে , যে সেই ডাক্তারের একটি মেয়ের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে,..। তখন "কে " একটু চিন্তায় পরে যায়। কিন্তু "কে" যেকোনো ভাবে ডাক্তার ও ক্রিমের বিয়েটা দিতে চায়। কারণ সেই ডাক্তার খুব ভালো মানুষ। আর ক্রিম তার সাথে সুখেই থাকবে।
কিন্তু ডাক্তার ও ক্রিমের বিয়ের জন্য, আগে সেই মেয়েটার ও ডাক্তার এর বিয়েটা ভাঙা দরকার। তাই "কে" সেই মেয়েটার সাথে দেখা করে। এবং সেই সব কথা তাকে বলে - যা "কে" ক্রিম কেও বলেনি।
"কে" সেই মেয়েটির অনুরোধ করে, যাতে সেই মেয়েটি ডাক্তারের সাথে বিয়েটা ভেঙ্গে ফেলে। আর, যাতে ক্রিম ও ডাক্তারের বিয়েটা হতে পারে।
মেয়েটি -ক্রিম ও "কে" এর খুশির জন্য এতে রাজি হয়। এবং ডাক্তারের সাথে তার বিয়েটা ভেঙ্গে ফেলে। এবং এরপর ক্রিম ও ডাক্তারের বিয়ে ঠিক হয়ে যায়।
ক্রিম যখন তার বিয়ের ড্রেস কেনে, তখন "কে " কে তার সাথে নিয়ে যায়। এবং তাকে তার "বর " সাজিয়ে, এবং নিজে "কে" এর বউ সেজে একটা ফটো তোলে।
এটা ক্রিম এজন্য করে, কারণ এটা তার স্বপ্ন ছিল! ক্রিম ও "কে" সারাজীবন একসাথে থাকবে! এটাই তাদের স্বপ্ন ছিল। কিন্তু তাদের স্বপ্নটা হয়তো আর পূরণ হবে না।
তাই ক্রিম এভাবেই সেই স্বপ্ন টা পূরণ করলো।
ক্রিমের সাথে এই অবস্থায় "কে" যেমন খুশি হয়..ঠিক ততটাই দুঃখীও হয়। কারণ এটাই তার ভালোবাসার মানুষ টার সাথে সবচাইতে আনন্দের ও কষ্টের মুহূর্ত।
এরপর "কে" ক্রিমের হাত ডাক্তারের হাতে তুলে দেয়। আর এভাবে ক্রিমের বিয়ে হয়ে যায়।
কিন্তু বিয়ের পরও ক্রিম - "কে" এর সাথে থাকে।
কিন্তু একদিন সেই দিনটি আসে,, - যেদিন " কে" এই পৃথিবীর থেকে চলে যায়।
ক্রিমের এখন এমন একটা পর্যায়ে আছে, যেখানে তার কাছে এই নিজেকে সামলানোর মত শক্তিও নেই।
এই পরিস্থিতিতে তাকে একমাএ "কে"- সামলাতে পারতো। কিন্তু এখন সেই এই পৃথিবীতে নেই।
"কে" স্বৃতি আর তার সাথে কাটানো মুহূর্ত গুলো ক্রিমের জীবনের একটা অংশ। আর "কে" ক্রিমের আত্মা ছিল.. এখন সেই আত্মা ক্রিমের শরীর থেলে চলে গেছে।
"কে" এর মৃত্যুর কিছুদিন পর ক্রিম নিজেও সুইসাইড করে। ক্রিম ও কে আবার এক হতে চায়। এই পৃথিবীতে তারা এক হতে পারেনি। কিন্তু তারা এখানে মিলিত হতে না পারলেও,.. অন্য এক দুনিয়ায় এরা দুজনে মিলিত হয়।
ক্রিমের সুইসাইডের পর সেই ডাক্তার ক্রিমের একটি অডিও হাতে পায়। যাতে ক্রিম - "কে" - এর কাছে এই বলে যে - আমি খুব তাড়াতাড়ি তোমার কাছে আসবো। আমরা আবার একসাথে থাকবো। তখন তুমি যদি আমার ওপর রাগ করো.. তাহলে আমি খুব কান্না করবো.!!
আসলে ডাক্তার নিজেও এই কথা জানতো,, যে ক্রিম কেন তাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। কারণ ডাক্তার "কে" এর ক্যান্সার ও তার শেষ ইচ্ছে সম্পর্কেও জানতো। তাই ডাক্তার "কে " ও ক্রিমের শেষ ইচ্ছে পূরণের অংশীদার হয়। এখানে ডাক্তারও নিজের সুখের বলিদান দেয়।
এই গল্পের শেষের দিকটায় এটা দেখানো হয় যে- ক্রিম "কে" এর সাথে যেই ফটো টা তোলে, - সেই ফটো টা দেখে পরে সে কাঁদতে থাকে । অন্যদিকে "কে" নিজেও তার চোখের জল ফেলতে থাকে।
এই গল্পের মাঝ খানে যে মেয়েটির চরিএ আসে, সে ডাক্তারের সাথে তার বিয়েটা এজন্যেই ভেঙ্গেছিল, যাতে "কে" ও ক্রিমের ইচ্ছে টা পূরণ হয়।
আর ডাক্তার ও সেই একই ভাবে তার সুখের বলিদান দিয়েছিল।
যখন "কে" এর মৃত্যুর কিছুদিন পর ক্রিম নিজেও সুইসাইড করে! তখন দেখানো হয় যে, সমস্ত কিছু স্তব্ধ হয়ে আছে! কেউ আর নড়াচড়া করছে না! সব কিছুই যেন থেমে গেছে!
আর শুধুমাত্র দুটি পাখি আকাশে একসাথে উড়ছে.. আর এই দুটি পাখি হল - "কে" ও ক্রিম.. যারা এখন আবার একসাথে আছে।
--- --------"----------- DISCLAIMER-----------------
এই গল্পটার সাথে আপনি হয়তো আসল গল্পটার মিল খুজে পাবেন না। কারণ আমি এই গল্পের শেষের দিকটাই মাঝের অংশে নিয়ে এসেছি। আর তার সাথে আমি সেই সেইসব ঘটন গুলোও বাদ দিয়েছি.. যা এই গল্পের শুরুতে আছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন